মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৯:১৫ পূর্বাহ্ন

মানবিক বিপর্যয়ের মুখে আফগানিস্তান

মানবিক বিপর্যয়ের মুখে আফগানিস্তান

স্বদেশ ডেস্ক:

৩৪ প্রদেশের ১৮টিই হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান। দিশেহারা আফগানিস্তান। প্রাণ বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে দলে দলে লোক ছুটছে রাজধানী কাবুলের দিকে। সেখানেও নিরাপাত্তা যে নিশ্চিত এমন নয়। তার ওপর অনাহারের অভিশাপ তো আছেই। এ কারণে আল জাজিরা জানিয়েছে, জাতিসংঘ সতর্ক করে বলে দিয়েছে, আফগানিস্তানে ‘মানবিক বিপর্যয়’ ঘনিয়ে আসছে। বিবিসি বলছে, আশপাশের রাষ্ট্রগুলোর কাছে সংস্থাটি অনুরোধ করেছে, তারা যেন মানবিক দিক বিবেচনায় সীমান্ত খোলা রাখে, জীবন নিয়ে আফগানরা যেন আপাতত পালিয়ে বাঁচতে পারে।

আল জাজিরার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু শুক্রবারই পাঁচটি প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে নিয়েছে তালেবান। এর আগের দিন দখল করেছিল আরও তিনটি রাজধানী। এখন পর্যন্ত পতন হওয়া রাজধানীগুলোর মধ্যে কান্দাহার, হেরাত, গজনি, লস্কর গাহ ও কুন্দুজ। এদের মধ্যে কান্দাহার দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ও হেরাত তৃতীয় বৃহত্তম শহর।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, আগামী ৩০ দিনের মধ্যেই কাবুলকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে তালেবানরা। আর এখন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নিতে পারে কাবুলের পুরো নিয়ন্ত্রণ। আফগানিস্তানের ভ‚মি থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ সব বিদেশি সেনা আগস্টের শেষ নাগাদ সরে যাওয়ার কথা। এরই মধ্যে অধিকাংশ সেনাই চলে গেছে। এই সুযোগে জোর শক্তি দেখাচ্ছে তালেবান। বস্তুত ক্ষমতাচ্যুতির ২০ বছর পর তালেবান যেন আরও বিষধর হয়ে উঠেছে।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থম্পসন ফিরি বলেছেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি, পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। আরও অনেক মানুষ অচিরেই ক্ষুধাপীড়িত হবে। সামগ্রিকভাবে মানবিক বিপর্যয়ের আলামতই পাওয়া যাচ্ছে।’

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার মুখপাত্র সাবিয়া মান্তু এক হিসাব দিয়ে বলেছেন, আফগানিস্তানে গত মে মাস থেকে ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। এদের ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু।

জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণবিষয়ক সমন্বয় কার্যালয়ের মুখপাত্র জেনস লার্কে বলেছেন, ‘তারা খোলা আকাশের নিচে, পার্কে, জনসমাগম এলাকায় ঘুমাচ্ছে। তাদের জন্য একটি আশ্রয় খুঁজে বের করাই এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়।’

ওদিকে গত দুই তিন মাসে আফগানিস্তানের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ট্রমাগ্রস্ত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক কর্মকর্তা। তিনি চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহে ঘাটতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, একসঙ্গে বহু সংখ্যক হতাহত মানুষ সামাল দেওয়ার জন্য চিকিৎসাকর্মীদেরকে সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

তালেবান কীভাবে দ্রæত এগোচ্ছে

এতদিন আফগান সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী ও সক্ষম হিসেবে তৈরি করার দাবি করে এসেছেন মার্কিন ও ব্রিটিশ জেনারেলরা। সেসব দাবি ও প্রতিশ্রæতি আজ বেশ ফাঁপা প্রতীয়মান হচ্ছে।

কাগজে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীতে সৈনিকের সংখ্যা ৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে রয়েছে আফগান সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং পুলিশ। কিন্তু তারপরও এ শক্তি পর্যাপ্ত নয়। এ ছাড়া নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও দুর্নীতি রয়েছে। বিবিসি মনে করছে, তালেবানের অগ্রগতির এটা একটা কারণ।

সৈন্যদের বেতন এবং সরঞ্জামাদির জন্য কোটি কোটি ডলারের সাহায্য পেয়েছে দেশটি। কিন্তু সেই অর্থটি ভালোভাবে ব্যয় করা হয়নি বলেই তালেবানের এমন উত্থান।

আবার অন্ধকার সাগরে ডুবছে আফগানরা

আফগানিস্তানের চলচ্চিত্র নির্মাতা সাহরা করিমি বিবিসি রেডিও স্কটল্যান্ডকে বলেছেন, বিশ্ব আফগানিস্তান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। নিজের দেশে ‘অন্ধকার সময়’ ফিরে আসছে বলে তিনি আতঙ্কিত। তার ভাষায়, ‘আমি বিপদে। তবে নিজকে নিয়ে আর ভাবছি না। আমার দেশের জন্য দুশ্চিন্তা হচ্ছে। আমাদের জীবনগুলো, আহা কী হবে সেই সব জীবনের গল্পগুলো? আমি ভাবছি আমাদের প্রজন্মকে নিয়ে। এটুকু পরিবর্তনের জন্য কত না কাট-খড় পোহালাম আমরা।’

আবেগভরা কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘ভাবছি কিশোরী ও তরুণীদের কথা। দুর্গতি কেবল আমার একার নয়। নিজেকে নিয়ে ভাবছিও না। আমি তো মাত্র একজন। কিন্তু আমাদের দেশটায় হাজার হাজার সুন্দর মনের, তরুণ, মেধাবী মেয়ে আছে।’

‘হেরাতের সিংহ’ আটক

আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশ দখলে নেওয়ার পর সেখানকার প্রখ্যাত নেতা মুহাম্মদ ইসমাইল খানকে আটক করেছে তালেবান বিদ্রোহীরা। তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদও তার আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ইসমাইল খান আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি হেরাতের সিংহ নামে পরিচিত। ডন

বিদেশিদের পলায়ন বিশ্বাসঘাতকতা

যুক্তরাজ্যের সাবেক আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী ররি স্টুয়ার্ট আফগানিস্তান থেকে আন্তর্জাতিক সেনা প্রত্যাহারকে ‘সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত’ বলে সমালোচনা করেছেন। স্কাই নিউজের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ পদক্ষেপকে ‘শতভাগ লজ্জাজনক’ এবং আফগান জনগণের সঙ্গে ‘চ‚ড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে লাখ লাখ আফগান। হৃদয়বিদারক। সেখানে লাখ লাখ শরণার্থী সৃষ্টি হবে।’তিনি বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসীদের থেকে সরে আসছি। আসলে কিন্তু সরে যাচ্ছি সত্যিকারের দুর্দশার মধ্যে মানুষকে ফেলে রেখে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক শরণার্থী নেওয়ার মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। ওদের জায়গা দিতেই হবে, কারণ এ আমাদেরই দোষ।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877